হামাসের আক্রমণের এক বছর পূর্তি ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের ক্ষতির প্রতিফলন

Daily Inqilab দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স

০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৬ এএম

ইসরাইল সোমবার দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক দিন ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এ হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলার প্রথম বার্ষিকীতে স্বরণ সভার আয়োজন করেছে, যে চলমান যুদ্ধে ইসরাইলের ধ্বংসাত্মক পাল্টা আক্রমণে ৪০হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে গাজায় প্রায় ১শ’ ইসরাইলি বন্দী রয়েছে।

ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা একটি অচলাবস্থায় পর্যবসিত হয়েছে এবং যুদ্ধটি ইসরাইল এবং হামাসের মিত্রদের মধ্যে একটি আঞ্চলিক সংঘর্ষের দিকে প্রসারিত হয়েছে, যার ফলে ইসরাইল লেবাননে আক্রমণ করেছে এবং ইরানের সাথে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে।

গাজায় ইসরাইল বনাম হামাস যুদ্ধের বার্ষিকীটি ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনি উভয় জনগণের জন্য গভীর ক্ষতি এবং মানসিক আঘাতকে প্রতিফলিত করে, যা এই সঙ্ঘাতের এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক রূপ নিয়েছে এবং ১৯৪৯ সালে ইসরাইলি রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণকারী লড়াইয়ের পর থেকে দীর্ঘতম যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।

গাজায় ইসরাইলের আত্মরক্ষা নামক যুদ্ধ সারা বিশ্বে ইসরাইলের প্রতি ক্রমাগত ক্ষোভের উদ্রেক করেছে এবং দেশটিকে আরও বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে। এর ফলে, বিশ্বের শীর্ষ আদালতে দেশটির বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ, মার্কিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে অস্থিরতা এবং কিছু গণতান্ত্রিক আইন প্রণেতাদের পাশাপাশি মার্কিন ইহুদিদের ইসরাইলি সরকারের নীতির ওপর ক্রমবর্ধমান অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। ইসরাইলিদের মধ্যে, গত অক্টোবরের চরম আঘাত এই ধারণা সৃষ্টি করেছে যে, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্ঘাতের কোনও শান্তিপূর্ণ সমাধান নেই। জাতীয় ঐক্যের প্রাথমিক বিস্ফোরণের পর, ইসরাইলি সমাজেও গভীরভাবে মেরুকরণ ঘটেছে এই প্রেক্ষাপটে যে, সরকার হামাসকে পরাজিত করার দিকে মনোনিবেশ করবে, নাকি অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্ত করতে একটি সমঝোতায় সম্মত হবে।

ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ এই বিরোধগুলি চাপা দেওয়ার জন্য সোমবারের বার্ষিকী অনুষ্ঠানগুলির আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু, কিছু জিম্মীর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন যে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু বন্দীদের জীবনের চেয়ে নিজের রাজনৈতিক টিকে থাকাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
নেতানিয়াহুর অতি-ডানপন্থী জোটের অংশীদাররা হুমকি দিয়েছে, তিনি যদি যুদ্ধ শেষ করার বিনিময়ে অপহৃতদের মুক্ত করে এমন একটি চুক্তিতে সম্মত হন, তাহলে তার সরকার পতন ঘটবে। অবশ্য, নেতানিয়াহু বলেছেন যে তিনি দেশের স্বার্থকে হৃদয়ে নিয়ে কাজ করছেন!

এদিকে, গাজার ফিলিস্তিনিরা অতুলনীয় ক্ষতির একটি বছরের দিকে ফিরে তাকালে আশ্রয়স্থলের ধ্বংস্তুপ, বিপর্যস্ত জীবিকা, বিঘ্নিত সম্পর্ক, নিহত প্রিয়জন স্বরণ করছে। এই অঞ্চলের ২০ লাখেরও বেশি লোকের ওপর এর গভীর প্রভাব পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হামাসের হামলাকে ‹অকথ্য নৃশংসতা› বলে নিন্দা জানিয়ে ইসরাইলের জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রতিরক্ষার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি সমর্থন পুনর্নিশ্চিত করেছেন। স্পষ্টভাবে তার বিবৃতি গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেনি, বরং তিনি বলেছেন যে হামাস যে সঙ্ঘুাত শুরু করেছিল তার কারণে ফিলিস্তিনি জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইসরাইলি সৈন্যরা এখনও গাজার অভ্যন্তরে যুদ্ধ করছে, আপাত দৃষ্টিতে যার কোনও শেষ নেই। যদিও হামাস বাহিনী ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে, সপ্তাহান্তে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী উত্তর গাজার বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে একটি উচ্ছেদ অঞ্চল ঘোষণা করে পরামর্শ দিয়েছে যে, এটি সেখানে তাদের আক্রমণ আরও তীব্র করতে পারে।

এক বছর আগে, দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলার জেরে গাজায় যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে, আরব রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিনিদের জন্য কূটনৈতিক সমর্থন প্রদান করেছে। কিন্তু সেই সমর্থন ইসরাইলি হামলা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারেনি, পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে পারেনি বা ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের সুবিধা দেয়নি।

ইসরাইল-হামাস দ্বন্দ্ব লেবাননেও ছড়িয়ে পড়েছে এবং গত সপ্তাহে ইসরাইলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করেছে। এর মধ্যে, আরব দেশগুলি একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তাদের লক্ষ্য হল ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ নিয়ে তাদের অভ্যন্তরীণ জনগণের ক্ষোভকে প্রশমিত করার সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের সাথে একটি স্থিতাবস্থা বজায় রাখা।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ
৪৩ বছর পর কুয়েতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী
মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল, কানাডায় কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন ট্রুডো?
৬ বছরের মধ্যেই চীনের হাতে হাজার পরমাণু বোমা! উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের
জার্মানিতে ক্রিসমাস মার্কেটে গাড়ি হামলার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫
আরও

আরও পড়ুন

২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের

২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের

ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা

চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা

চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত

চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত

এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে

এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে

ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী

ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী

আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ

আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ

বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত

বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত

মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০

মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক

ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন

ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন

কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু

কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু

আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ

আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ

ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী

ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী

সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু

সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু

যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের

যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের

পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন

পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন

শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন

শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন

টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নীতি করার তাগিদ

টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নীতি করার তাগিদ

লোকসংগীত শিল্পী নিপা আহমেদ সারাহ্ এর একক সঙ্গীত সন্ধ্যা

লোকসংগীত শিল্পী নিপা আহমেদ সারাহ্ এর একক সঙ্গীত সন্ধ্যা